পার্বত্য চট্টগ্রামের মুরং, তঞ্চ্যঙ্গা, নাগা, কুকি ও ত্রিপুরাদের মতো চাকমারাও প্রাচীন ও আদি জাতিসত্তা। আগে সেখানে অরণ্য ছিল নিবিড় ও নিচ্ছিদ্র। তখন আদি বাসিন্দারা ছিল সেখানকার একচ্ছত্র অধিপতি। আদি জাতিসত্তার মধ্যে চাকমা ও মারমাদের আছে বর্ণমালা, আদি গ্রন্থ ও প্রাচিন সাহিত্য। এই আরণ্যচারী অধিবাসীরা তাদের নিজস্ব আচার-আচরণ, রীতি-নীতি,সামাজিক প্রথা, অনুশাসন এবং তাদের জীবনে অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভাব সম্বন্ধে একান্তভাবে আস্থাশীল। অপদেবতা ও ভালো দেবতার অমিত শক্তি সম্বন্ধে তাদের সংস্কারও তাই সহজাত। আর প্রেম-ভালোবাসা ও ধর্মের প্রতিও তারা নিয়মনিষ্ঠ। সেই জগৎ আমাদের এত অচেনা, তার ভূপ্রকৃতি এত অনুভূতিময় ও সুতীব্র যে তা সাধারণ বাঙালি জীবন ও সাহিত্য থেকে প্রায় সম্পূর্ণ আলাদা। পার্বত্য চট্টগ্রামের এই লোকজ ভূমিকে তীব্র অনুরাগ ও অভিনিবেশ দিয়ে গল্পে তুলে ধরেছেন বিপ্রদাশ বড়ুয়া। 'চন্দ্রমল্লির প্রণয়' কাল হিসাবে মাত্র দু' শ' বছর আগের ঘটনা। 'বিজয়সূর্য ও রঞ্জাবতী' বা 'একটি প্রাচীন প্রেমকাহিনী' সেই তুলনায় আরো প্রাচীন। 'কঙ্কালের পর্বত' গল্পটি সর্বপ্রাচীন এবং জাগতিক প্রেম-বহির্ভূত। অন্য দুটি অদূর অতীতের প্টভূমিতে রচিত। গল্পগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়না-স্বরূপ। গল্পের পাত্রপাত্রীদের কাছে পার্বত্যভূমির প্রতিটি অংশই অত্যন্ত পবিত্র। গাছের প্রতিটি চকচকে আগা, বনভূমিতে জমে থাকা কুয়াশা, প্রতিটি পতঙ্গের গুনগুন তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিতে সমৃদ্ধ। নদী ও পাহাড় তাদেরই ভাই বোন। নদী তাদের তৃষ্ণা মেটায়, পাহাড় জোগায় খাদ্য। গল্পগুলোর মৌল বীজ হয়তো প্রাচীন ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে তিব্বত ও চীন হয়ে জাপানে প্রবেশ করে। লাফকাদিও হার্ন-এর পৌরাণিক বা লোক জাপানি সঙ্কলন থেকে তা নতুন ও একান্তভাবেই এদেশীয় করে পরিবেশন করেছেন বিপ্রদাশ বড়ুয়া। আর তা লেখকের হাতে একান্তই পার্বত্য লোক-প্রণয়-কাহিনী হয়ে উঠেছে।
শিরোনাম | আরণ্য প্রেমকথা |
---|---|
লেখক | বিপ্রদাশ বড়ুয়া |
প্রকাশনী | তাম্রলিপি |
Need an account? Register Now