মানুষের মন ভাঙে আর নদীর ভাঙে কূল। মানুষের যেমন মন বদলায় নদীরও তেমন গতিপথ বদলায়। তার ফলে সৃষ্টি হয় নতুন নদী। আর এভাবেই পদ্মা নদীর পথ বদলানোর খেলায় বিক্রমপুরের বুকে নতুন এক নদীর সৃষ্টি হয়। বারোভূঁইয়াখ্যাত মহাপ্রতাপশালী রাজা চাঁদ রায় ও কেদার রায়ের রাজধানী শ্রীপুরের সকল কীর্তি নাশ করেছিল বলে নদীটির নাম হয়ে যায় কীর্তিনাশা। এই নদী বিক্রমপুরের মানচিত্রকেই পালটে দিয়েছিল। ইতিহাসখ্যাত বিক্রমপুরকে দুভাগ করে নাম হয়ে যায় দক্ষিণ বিক্রমপুর ও উত্তর বিক্রমপুর। কীর্তিনাশার দুপাড়ের সকল ভূমি ও স্থাপনার মতো মানুষের হৃদয়ও ভেঙেছিল। আশেপাশের হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল। হারিয়ে গিয়েছিল পাড়াপ্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন-সহ সকল আপনজন। কীর্তিনাশার পাড়ে ছিল বিক্রমপুরের আরেক রাজা রাজবল্লভের রাজধানী রাজনগর। সেই রাজনগরের সকল কীর্তিও কীর্তিনাশা নাশ করে যেন নামকরণের সার্থকতা অর্জন করে। সামান্য একটি খাল হঠাৎ করে বিশাল নদী হয়ে যাওয়ার কারণে নয়ন ও নন্দিতা নামে দুজন প্রেমান্ধ মানুষের হৃদয়ও ভেঙে ছারখার হয়ে যায়। দুজন দুদিকে পড়ে যায়। এক সময় কীর্তিনাশা তাদের ঘরবাড়িও ভেঙে ফেলে এবং কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন করায়। একদিকে থাকার জায়গা নেই অন্যদিকে পেটেও অন্ন নেই। তার ওপর বুকের মাঝে জমে থাকা ভালোবাসার মানুষের কোনো দেখা নেই। এক জায়গায় ঘর তুলে কিছুদিন থাকতে না থাকতেই আবার সেই জায়গাও ভেঙে যায়। এভাবেই কীর্তিনাশা বিক্রমপুরের মানুষকে নিয়ে ফুটবলের মতো খেলতে খেলতে এদিক থেকে ওদিক ফেলে এক ভয়ংকর নেশায় মেতে ওঠে। এক সময় সেই কীর্তিনাশা তার সকল মিশন শেষ করে পদ্মার বুকে হারিয়ে যায় আর পদ্মা নদীও তার গতিপথ পরিবর্তন করে নতুন পথে প্রবাহিত হয়।
শিরোনাম | ভাঙন |
---|---|
লেখক | রেদোয়ান মাসুদ |
প্রকাশনী | অনিন্দ্য প্রকাশ |
Need an account? Register Now