আমার একটি বউ এবং দুটি কন্যা আছে। গাড়ি নেই, ফ্ল্যাট নেই, মাথায় নানা ছকের গল্পের প্লট ছাড়া ঢাকা অদূরে, অগভীর জলের নিচে অন্য কোনো স্থাবর প্লট নেই।
তবে ৩৫ বছরে দুটি সন্তান, একটি বউ, একটু বেশি হয়ে গেল না? তা হয়তো গেল। আমি বিয়ে করেছি ম্যালা আগে। ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারেই। সহপাঠীকে, অবশ্যই প্রেম-ভালোবাসার কেস।
সে অন্য গল্প এবং অনেক পুরোনো গল্প।
তবু সেই পুরোনো গল্পই আমাদের বয়ে বেড়াতে হয়, এটাই নিয়ম। আমি আর মিতু দুই কন্যাকে বুকে নিয়ে সেই পুরনো, মরচে পড়া, ঘুণে ধরা, শ্যাওলা পড়া, একটু বিবর্ণ হয়ে যাওয়া গল্প বয়ে বেড়াই। এর নাম সংসার।
আমাদের সংসারে কোনো জ্বালাময়ী সমস্যা নেই, আবার খুব উপচে পড়া সুখও নেই। সংসার সম্পর্কে এ রকম একটি সমস্যার কথা একদা শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন— জলে নৌকা থাকুক, সমস্যা নেই, নৌকায় জল থাকলে সমস্যা। তুমি সংসারে থাকো ক্ষতি নেই, কিন্তু তোমার ভেতর যেন সংসার না থাকে।
আমরা কেউ শ্রীরামকৃষ্ণ নই। কাজেই সুনাগরিকের মতো আমাদের সংসারের ভেতর যেমন বাস করতে হয়, তেমনি আমাদের ভেতরেও জোরালোভাবে সংসার আছে, সংসার থাকে। মাস গেলে বাড়িভাড়া, আইপিএসের ব্যাটারি নষ্ট হলে, সেটি বদলে ফেলা, বড় মেয়েটা অঙ্কের চেয়ে ইংরেজিতে কেন কম নম্বর পেল, সেটি নিয়ে ভাবা, ছোট মেয়েটার জ্বর হলে তার মুখে থার্মোমিটার পুরে দেওয়া— কত কাজ। সংসারে না থেকে উপায় আছে!
অতএব একটা পুরনো গল্পের বাঁধা চরিত্র হয়েই তো আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। বেঁচে থেকে আমরা সেই পুরনো এবং ছকবাঁধা গল্পের পাতায় পাতায় ঘুরি, নির্ধারিত সংলাপ আউড়ে যাই, এক সময় শেষ পৃষ্ঠায় এসে গল্পটা আচমকা শেষ হয়ে যায়। তারপর আবার, ইয়েস আবার, সেই গল্পটা প্রথম পাতা থেকে শুরু হয় এবং একই গতিপথে শেষ পাতা অবধি চলতে থাকে।
শিরোনাম | কাগজের নৌকা |
---|---|
লেখক | আশীফ এন্তাজ রবি |
প্রকাশনী | আদর্শ |
Need an account? Register Now