ধোঁয়া যেমন আগুনের নিশানা; স্লোগান তেমনই রাজনৈতিক ধারার দিকচিহ্ন। কাঁটাগাছেও যেমন বাহারি ফুল ফুটে থাকে; স্লোগান তেমনই রাজনীতির কঠিন ময়দান থেকে উৎসারিত সুরধ্বনি। রাজনীতি না স্লোগান আগে-এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে; কিন্তু এই দুইয়ের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। বরং কঠিন রাজনৈতিক তত্ত্বকে সহজ ভাষায় জনসাধারণের হৃদয়ে ছুঁয়ে দিতে কিংবা মাথায় গেঁথে দিতে স্লোগান এক অব্যর্থ অস্ত্র। স্লোগান একটি জনগোষ্ঠীর সময় শুধু নয়, সংস্কৃতিরও পথরেখা।
রাজনীতির সঙ্গে স্লোগানের পরম্পরা ও গুরুত্ব আমাদের ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের গ্রন্থাবলিতে সামান্যই স্থান পেয়েছে। স্বীকার করতে হবে, ইউরোপ ও আমেরিকায় রাজনৈতিক স্লোগান নিয়ে গবেষণা ও গ্রন্থ রচনা বিরল নয়। কিন্তু বাংলাদেশে ‘স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি’ সম্ভবত এ ধরনের প্রথম গ্রন্থ। মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খানের এই গ্রন্থ ২০০৮ সালে প্রথম প্রকাশের পর থেকেই বহুল আলোচিত।
উপমহাদেশে আধুনিক রাজনৈতিক ধারা সূচিত হয়েছিল সিপাহি বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু ‘নেটিভ’ রাজনীতি দানা বেঁধেছিল আরও পরে, বিশ শতকের গোড়ায়। তখন থেকেই রাজনৈতিক স্লোগানের পরিধি বাড়তে থাকে। ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের সাড়া জাগানো স্লোগান ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। সেই থেকে ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ‘যদি তুমি ভয় পাও/ তবে তুমি শেষ/ যদি তুমি রুখে দাঁড়াও/ তবে তুমিই বাংলাদেশ’ পর্যন্ত সংকলিত হয়েছে এই বইয়ে।
নাম ‘স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি’ হলেও এতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ আন্দোলনের স্লোগানও সংকলিত হয়েছে। ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী ভারতের এই সময়ের আলোচিত স্লোগানগুলো স্থান পেয়েছে। দুই মলাটের মধ্যে যেন উঠে এসেছে গত এক শতাব্দীর রাজনীতির পত্র-পল্লব।
এই গ্রন্থ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনন্য দলিল। এতে সংকলিত স্লোগানগুলো যেমন কৌত‚হল উদ্দীপক, তেমনই চিন্তাজাগানিয়া।
শিরোনাম | স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি |
---|---|
লেখক | আবু সাঈদ খান |
প্রকাশনী | পাঠক সমাবেশ |
Need an account? Register Now