বঙ্গবন্ধু যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন, ১৯৭৫ সালে তাঁকে হত্যার পর হঠাৎ সেসব কার্যক্রম থমকে যায়। জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম বীরাঙ্গনাদের সমাজে পতিত করে ফেলে। আশ্রয়কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে একেবারে সহায়সম্বলহীন অবস্থায় রাস্তায় এসে দাঁড়ান। এর একটি উদাহরণ সিরাজগঞ্জের সেই কেন্দ্র। ১৯৭৫ সালে সাফিনা লোহানী, সাফিনা হোসেন ও আমিনা বেগম মিনার নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র চলছিল, জিয়াউর রহমান এক ফরমানবলে তা বন্ধ করে দেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিরাজগঞ্জে আসেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষাতে ঐ ৩৫ জন বীরাঙ্গনাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে একসঙ্গে মঞ্চে ওঠেন। সেই সম্মান ছাড়া বীরাঙ্গনাদের ভাগ্যে আর কোনো সম্মান জোটেনি।’সেই ৩৫ জনের মধ্যে ১৪ জন মারা গেছেন । বাকি ২১ জন লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে এখনো বেঁচে আছেন। বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসন যতটুকু হয়েছিল তা বঙ্গবন্ধুর আমলেই হয়েছিল। ইতোমধ্যে বীরাঙ্গনাদের কথা সবাই ভুলতে থাকে। এবং এক সময় বিষয়টি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। সারাদেশের বীরাঙ্গনা মহিলাকে বঙ্গবন্ধুর সরকার পুনর্বাসিত করতে পারেনি স্বাভাবিকভাবেই। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছিলেন তাদেরই সাহায্য করতে পেরেছিল সরকার । আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না, তবে সম্পদ ছিল না। তাই যতটুকু করা দরকার ততটুকু করা যায়নি। আজ পর্যন্ত জানা যায়নি, কতজন বীরাঙ্গনাকে হত্যা করা হয়েছে আর কতজন আত্মহত্যা করেছেন, হারিয়ে গেছেন কতজন। যারা পুনর্বাসিত হয়েছেন তাদেরও মানসিক ক্ষত বয়ে বেড়াতে হয়েছে। বিয়ের পরও পরিবার ও সমাজ দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। অসহায় পাঁচ লক্ষের এ এক করুণ কাহিনি যার পুরোটা কখনো জানা যাবে না। সুরমা জাহিদের ধৈর্য ও পরিশ্রম আমাকে বিস্মিত করেছে। পরম মমতায় তিনি ৩৫৫ জন নারীর মর্মন্তুদ কাহিনি বিধৃত করেছেন যা ইতিহাসের অমূল্য উপকরণ হয়ে থাকবে। তাঁর কাজ অব্যাহত থাকুক এই কামনা করি কারণ তাঁর মতো বীরাঙ্গনাদের নিয়ে দেশে এমন কাজ কেউ করতে পারেননি। তাঁকে অভিনন্দন। মুনতাসীর মামুন
শিরোনাম | বীরাঙ্গনা সমগ্র ৪ |
---|---|
লেখক | সুরমা জাহিদ |
প্রকাশনী | অনিন্দ্য প্রকাশ |
Need an account? Register Now