মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক রচনার জন্য সুরমা জাহিদ এবার বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। অনেক দিন ধরে বীরাঙ্গনাদের সম্পর্কে তথ্যনির্ভর গ্রন্থ রচনা করে আসছেন তিনি, এবারে তার যোগ্য স্বীকৃতি পেলেন।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে পাশবিকতার পরিচয় দেয়, ইতিহাসে তার তুলনা কমই পাওয়া যায়। এই পৈশাচিকতার একটা বড়ো অংশের শিকার হয় মেয়েরা। বাংলাদেশে এমন এলাকা নেই, যেখানে পাকিস্তানি হানাদারেরা নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেনি। উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে, হিন্দু, মুসলমান কিংবা অন্য ধর্মবিশ্বাসী, বিবাহিত বা অবিবাহিত, বাঙালি কিংবা আদিবাসীÑ সব ধরনের নারীই হয়েছে মানবরূপী এই দানবদের লালসার শিকার। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করে, তখন তাদের আস্তানায় নিগৃহীত মেয়েদের পাওয়া গিয়েছিল যাদের অনেকেরই গর্ভসঞ্চার হয়েছিল।দুর্ভাগ্যের বিষয়, সমাজে তাঁরা সসম্মানে গৃহীত হননি। বাংলাদেশ সরকার তাঁদের বীরাঙ্গনা আখ্যা দিয়েছিল, তাঁদের জন্য কিছু কিছু আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু অনেকের পরিবার তাঁদের ফিরিয়ে নেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বিদেশি বন্ধুরা লাঞ্ছিতা নারীদের অনাকাক্সিক্ষত সন্তানকে আইনসম্মত উপায়ে দত্তক গ্রহণ করেন, কিন্তু এ নিয়ে কিছু সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। যুদ্ধশিশুরা বিদেশে সাদরে বড়ো হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশে এসে নিজের শিকড়ের কিংবা জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজ করে গেছে, তারাও নিজেদের জীবনে এক ট্র্যাজিক পরিণাম প্রত্যক্ষ করেছে।এখন সুরমা জাহিদের সব লেখা ‘বীরাঙ্গনা সমগ্র’ নামে চার খ-ে প্রকাশ পেতে চলেছে। মূল বাংলা রচনার সঙ্গে অধ্যাপক আবদুস সেলিমকৃত অনুবাদও তার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সুরমা জাহিদ শুধু বীরাঙ্গনাদের আখ্যান সংকলিত করে দায়িত্ব শেষ করেননি, তিনি চেষ্টা করেছেন তাঁদের বর্তমান দুর্দশা ঘোচাতে। একজনের চেষ্টায় আর কতটা হবে। তবু সে প্রয়াসের বিশেষ মূল্য রয়েছে।‘বীরাঙ্গনা সমগ্র’, আশা করি, আমাদের ইতিহাসের অপরিহার্য অংশ হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে হয়তো নতুন প্রজন্ম এবং আগামী পৃথিবী জানবে, স্বাধীনতা লাভের জন্য বাংলাদেশকে কত মূল্য দিতে হয়েছিল।আনিসুজ্জামান
শিরোনাম | বীরাঙ্গনা সমগ্র ১ |
---|---|
লেখক | সুরমা জাহিদ |
প্রকাশনী | অনিন্দ্য প্রকাশ |
Need an account? Register Now