১৯৮৪ সালের আগে নরসিংদী (প্রচলিত বানানে) সম্পর্কে কারো আগ্রহের কথা শোনা যায় নি। সম্প্রতিকালে তার ক্ষতিপূরণ ঘটেছে ‘নরসিংদী’ থেকে ‘নরসিংদী’র উত্তরণে। মাঝখানে আরও ভর্তুকির ব্যাপার ছিল পরগণা ‘মহেশ্বরদী’র কথাতেও। অধ্যাপক সুরেন্দ্রমোহন পঞ্চতীর্থের মৃত্যু (বাং. ১৩৬২) আমাদেরকে এই হারানো অতীতের কাছে এনে দেয়। ...মোহাম্মদ সা’দাত আলী সাহেব সেই ধারাবাহিকতারই অপর দিগন্ত-উন্মোচক। বলা চলে তাঁর সরস নিপুণ ও মৃত্তিকাসংলগ্নী পাকা হাতের ছোঁয়ায় বহমান ধারাটিতে একটি নতুন উদবোধ তথা রেনেঁশাসের আহŸান যুক্ত হয়েছে। তাঁর এই প্রয়াসেরই মূর্ত্ত প্রতিভাস বর্তমান গ্রন্থটি। নরসিংদীর লোকসাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার ইতিহাসে এটা একটা মাইলস্টোন বিশেষ । গ্রন্থটি মোট দুটি অংশে বিভক্তÑআলোচনা ও শব্দকোষ। আলোচনায় রয়েছে সাতটি ঋদ্ধ প্রবন্ধের বিন্যাস এবং গৃহীত বিষয়সমূহের সহজ, আকর্ষণীয় ও অনুপম বিবরণ। এতে জেলা পরিচিতি, স্থানীয় ভূ-সংস্কৃতি ও লোকায়ত প্রসঙ্গাদি, ভাষারূপের প্রকৃতি বা স্বরূপ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, বিভিন্ন সমাজের অসম্প্রদায়িক অবস্থান এবং সামাজিক আচারাদি ও রীতিনীতি, যাত্রা-গান-পালাগীত-লোককথা প্রভৃতি সৃষ্টিশীলতার বিষয়াদি ও চিত্র সংযোগে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোক-ব্যক্তিত্বকুলের অন্তর্গত তথ্য এবং পরিশেষে খেলাধুলার বিষয়গুলি মাঠতথ্যের ভিত্তিতে যথাবিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। বর্ণিত প্রবন্ধাদিতে শুধু বিষয়ের বৈচিত্র্যই ধরা পড়ে নি, গ্রন্থকারের দূরদৃষ্টি এবং লোকজ্ঞানের পরিচয়ও সবিশেষ প্রকাশ পেয়েছে। লোকজ বিষয়ের এত বিস্তৃত তথ্য একটি গ্রন্থে সাধারণত দুর্লভ। লেখকের এই অভিনিবেশ এবং আযতœ পরিবেশন পাঠককে নিঃসন্দেহে চমৎকৃত করবে। এই ধরণের রচনার বিশেষত্ব রাবীন্দ্রিক ংঁনলবপঃরারঃু-তে আত্মসমর্পণ। হিমালয় দেবতাত্মা স্বরূপ হলেও কোনও লোকালয়স্থ ক্ষুদ্রগিরিরও আকর্ষণ কম হয় না। সা’দাত আলী সাহেবের কাজের স্বরূপও তেমনি। সূর্য থাকেন আকাশে, কিন্তু সূর্যহীন অবকাশে গৃহকোণ আলোকিত হয় ‘মাটির প্রদীপে’ই । সা’দাত সাহেব আমাদের সেই প্রিয় প্রদীপ। তাকে জানাই আন্তরিক অভিবাদন।
শিরোনাম | নরসিংদীর লোকজ ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি |
---|---|
লেখক | মোহাম্মদ সা’দাত আলী |
প্রকাশনী | অনিন্দ্য প্রকাশ |
Need an account? Register Now