১৯৭১-এ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা নিরীহ বাঙালি নারীদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ অবর্ণনীয় পাশবিক নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিল, হারিয়েছিল তাঁদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ-ইজ্জত, সম্ভ্রম।১৯৭১-এ পাক হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার একজন বীরমাতার স্বগত কথন- এমন নির্যাতন করেছে, চার-পাঁচটি মাস, যার বর্ণনা দেওয়ার মতোন না। এমন নির্মমভাবে নির্যাতন করতো, দেখা গিয়েছে, তাদের ছায়া দেখলেই ভয়ে সবাই কাঁপতো। যখন মনে পড়ে সেইসব রাতের কথা, ভয়ে গা কাঁপে। স্বপ্নে দেখি সেই ভয়াবহ দিনগুলো। তখন চিৎকার করে উঠি। ঘুম ভেঙে দেখি স্বপ্ন দেখছি, বাড়ি থেকে এসে ধরে নিয়ে গেল। ঠিকমতো খাবার ছিল না। গোসল নেই, ঘুম নেই। দিনের বেলায় এটা-সেটা কাজ করাতো। সারারাত করত নির্যাতন।যতদিন আটক ছিলাম ততদিন দুনিয়ার সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম। তাদের অত্যাচারের কারণে ভুলে থাকতে হয়েছিল। যখন ছাড়া পেয়েছি, দুনিয়ার আলো-বাতাস দেখেছি, তখন একটু আশা নিয়ে ছুটে এলাম নিজের এলাকায়, নিজের আপনজনের কাছে। ভেবেছিলাম, তারা আমার ব্যথায় ব্যথিত হবে, আমার দুঃখে দুঃখ পাবে, আমার কষ্টে কান্না করবে। দেশ, জাতি আমাকে নিয়ে গর্ব করবে। আমাকে দেখিয়ে লোকে বলবে, বিজয়ী নারী যাচ্ছে, দেখো। কিন্তু কী পেলাম? তা তো আর বলার অপেক্ষা থাকে না। আজ আমি এবং আমার মতো যারা আছে, কোথায় তারা বিজয়ী নারী বলবে, মাথা উঁচু করে সমাজে চলবে, তা না হয়ে আজ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। সমাজ আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে কলঙ্কিত বলে। কী ভাগ্য, কী কপাল আমার!ধারাবাহিক কয়েকটি খ-ের পর বীরাঙ্গনাদের করুণ কাহিনি নিয়ে এবার প্রকাশিত হচ্ছে ‘একাত্তরের যুদ্ধে নির্যাতিত নারী’। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে জানতে হলে জানতে হবে বীরাঙ্গনাদের ইতিহাসও। তাঁদেরকে ব্যতীত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পাশাপাশি বীরাঙ্গনা-বীরমাতা-নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা ও অবস্থানকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করবে, যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে, সমাজে মাথা উঁচু করে প্রতিষ্ঠিত হোকÑ এই প্রত্যাশা।
শিরোনাম | বীরাঙ্গনাদের কথা ৬ : একাত্তরের যুদ্ধে নির্যাতিত নারী |
---|---|
লেখক | সুরমা জাহিদ |
প্রকাশনী | অনিন্দ্য প্রকাশ |
Need an account? Register Now