১৯৭১-এ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা নিরীহ বাঙালি নারীদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ অবর্ণনীয় পাশবিক নির্যাতন ও নিপীড়ণের শিকার হয়েছিল, হারিয়েছিল তাঁদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ-ইজ্জত, সম্ভ্রম।১৯৭১-এ পাক হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার একজন বীরঙ্গনা-বীরমাতার স্বগত কথন- এমন নির্যাতন করেছে, চার-পাঁচটি মাস, যার বর্ণনা দেওয়ার মতো না। এমন নির্মমভাবে নির্যাতন করত, দেখা গিয়েছে, তাদের ছায়া দেখলেই ভয়ে সবাই কাঁপত।পোশাকধারী সৈন্যরা রাতের গভীর থেকে শুরু করে সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা সকল সময় আক্রমণ শুরু করত। কচুকাটা করতে থাকে মেশিনগানের গুলির ধারায়। এটা ছিল পুরোপুরি পাইকারি পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক হত্যাকা- এবং নারীর শরীর যৌবন নিয়ে খেলা। এই নিষ্ঠুর নির্মমতার শিকার হয় প্রায় দুই থেকে চার লাখ নারী। তাদের এই নিষ্ঠুর বর্বরতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি ছোট্ট পুতুলখেলার পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে সত্তর বছরের বৃদ্ধারাও। তাদের এই নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়া বহু নারী হয়েছে দেশছাড়া, পরিবার-ছাড়া। এমনও নারী আছেন যে, তাঁর এই অবস্থায় তাঁর স্বামী এমনকি তাঁর জন্মদাতা বাবাও তাঁকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তাড়িয়ে দেয়। মানসম্মান হারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি বহু নারী। লজ্জার ভয়ে বেছে নিতে হয়েছিল আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ। তবুও অনেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় পাগলের মতো।ধারাবাহিক কয়েকটি খ-ের পর বীরাঙ্গনাদের করুণ কাহিনি নিয়ে এবার প্রকাশিত হচ্ছে ‘একাত্তরের বীরমাতাদের অজানা কথা’। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে জানতে হলে জানতে হবে বীরাঙ্গনাদের ইতিহাসও। তাঁদেরকে ব্যতীত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পাশাপাশি বীরাঙ্গনা-বীরমাতা-নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা ও অবস্থানকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করে, যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে, সমাজে মাথা উঁচু করে প্রতিষ্ঠিত হোক- এই প্রত্যাশা।
শিরোনাম | বীরাঙ্গনাদের কথা ৭ : একাত্তরের বীরমাতাদের অজানা কথা |
---|---|
লেখক | সুরমা জাহিদ |
প্রকাশনী | অনিন্দ্য প্রকাশ |
Need an account? Register Now